পানির হাহাকার নিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় ‘অন্তর্ধান’ - Get Latest Bangla News Online । Shahoj Kichhu

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, July 03, 2012

পানির হাহাকার নিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় ‘অন্তর্ধান’


‘অন্তর্ধান’ এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মার বুকে জেগে ওঠা বালুচর ও তার দু’পারের মানুষের বর্তমান জীবনাচারনের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র। পূর্ণদৈর্ঘ এ চলচ্চিত্রটি নির্মান করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড। প্রযেজনা করেছেন শবনম শেহনাজ  চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম। ছবিটি বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিজের লেখা চিত্রনাট্যের ওপর নির্মিত ‘অন্তর্ধান’ ছবিতে পরিচালক ডায়মন্ড দেখাতে চেয়েছেন, পদ্মার শুকিয়ে যাওয়া বুকে হাজারো প্রাণের আর্তনাদ, পানির জন্য হাহাকার। বলতে চেয়েছেন, জীবিকা হারানো জেলেদের জীবনে নেমে আসা চরম বিপর্যয়ের কথা। বোঝাতে চেয়েছেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বৈরী আচরনের প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে ?
গত বছরের ৮ মার্চ অন্তর্ধান’র স্যুটিং শুরু করেন ডায়মন্ড। পদ্মাপারের হাজার হাজার মানুষের আশা-আকাক্সা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে পুরো স্যুটিং টিম নিয়ে ছুটে যান পদ্মার রু চরে। লোকেশন হিসেবে বেছে নেন পাকশির হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে

জেগে ওঠা ধুধু বালুচর। স্যুটিং শেষ করেন ৪ এপ্রিল (২০১১)। ছবিটির প্রধান দু’টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও নায়িকা নিপুণ।

গত ৯ জুন অন্তর্ধান’র পোস্টার প্রদর্শনের ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করেন ডায়মন্ড। ঠিক যে স্থানটাতে অন্তর্ধানের স্যুটিং হয়েছিল, সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে, বালুচরে

, পড়ন্ত বিকেলে এ প্রদর্শনী করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। পদ্মা পারের সেই দুর্দশাগ্রস্থ, হাহাকার তাড়িত মানুষগুলোর সামনে তুলে ধরেন তাদেরই জীবনের প্রতিচ্ছবি। অন্তর্ধান’র অংশ বিশেষও (প্রমো) প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘নদী হলো প্রাণের উৎস। নদীহীন দেশ বালুকাময় মরুভূমির মতো। আমারাও এমন পরিনতির দিকে যাচ্ছি। একসময় যে পদ্মায় মাছেরা সাতার কাটতো, জেলেরা নৌকায় চড়ে মাছ ধরতো, সেখানে আজ ধুধু বালুচর। সেই বালুচরে এখন শ্রমিকরা দল বেধে বালু তুলছে। সেই বালি নিয়ে, পদ্মার বুক চিরে চলে যাচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ট্রাক। ঘটঘট শব্দে, ধোঁয়া উড়িয়ে। এ পদ্মাকে মৃতপ্রায় বললেও ভুল হবে। পদ্মাতো অনেক আগেই মরে গেছে, আমরা এখন সেই মৃত পদ্মার কঙ্কালের মধ্যে বসে রয়েছি।’ চাপা অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলেন প্রবীণ এই সাহিত্যিক।

পরিচালক ডায়মন্ড জানান, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, পদ্মাপারের দুর্দশাগ্রস্থদের প্রতি সমবেদনা জানানো এবং বিশ্ববাসীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে ছবিটি নির্মান করেছেন তিনি। পোস্টার প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সম্পুর্ণ নিজ খরচে ওই এলাকার মানুষদের ছবিটি দেখিয়ে যাবেন।

‘অন্তর্ধান’ ছবির একটি অংশে ডায়মন্ড দেখিয়েছেন, ‘পদ্মার চরে দুই কিশোর-কিশোরী খেলার ছলে ছোট্ট দু’টি পুকুর খোড়ে। সেই পুকুরে একটি রুপালী মাছ ছাড়ে কিশোর মেয়েটি। একটা সময় পুকুর শুকিয়ে যায়, মাছটি পানির অভাবে ছটফট করতে থাকে। মাছটিকে বাঁচাতে ছেলেটির পুকুর থেকে একটু পানি চায় মেয়েটি। নিরুপায় হয়ে এক পর্যয়ে পদাঘাত করে পাশের পুকুরের বাঁধ ভেঙ্গে দেয় মেয়েটি।’ রূপক এই দৃশ্যে পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন, মানব সৃষ্ট আচরনের ফলে পদ্মা আজ মরতে বসেছে। মরতে বসেছে অসংখ্য জলজ প্রাণী। জীবিকা হারাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।

ছবিটি নির্মানের উদ্দেশ্য নিয়ে আলাপকালে ডায়মন্ড বলেন, ছবিটিতে তিনি পদ্মার দুই পারের মানুষগুলোর বর্তমান দুঃখ কষ্টের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। বলতে চেয়েছেন, ওই এলাকার জেলেদের জীবিকা হারিয়ে অসহায়ত্ব বরণের কথা, তাদের জীবন সংগ্রামের কথা। পানির জন্য তাদের হাহাকারের কথা। এর কারন সম্পর্কে দর্শকদের মধ্যে উপলোব্ধি জাগিয়ে তোলা।

ডায়মন্ড বলেন, ‘গোটা বিশ্ব যেভাবে তীব্র পানি সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে একটা সময় হয়তো পেট্রোলের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে পানি কিনতে হবে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা  পেতে হলে, এখনই এ সংকট মোকাবেলা করতে হবে। আর এজন্য নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন, এর ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও প্রাণিকুলকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।’

সমাজের অধিকারবঞ্চিত মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মান করে এরই মধ্যে ‘নিচুবর্গের মানুষের জীবনের রূপকার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তরুণ এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। এ পর্যন্ত তিনি ৩টি পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র, ৪০টির মতো নাটক ও টেলিছবি নির্মান করেছেন। প্রতিটি চলচ্চিত্র ও নাটকে ডোম, চামার, সাঁওতাল, ধোপা, জেলে, পতিতাদের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। নাচোল কৃষক-সাঁওতাল বিদ্রোহের ওপর নির্মিত ‘নাচোলের রানী’ তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। পতিতাদের নিয়ে নির্মিত ‘গঙ্গাযাত্রা’ চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি ২০০৯ সালে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার, স্টার সিনে পুরস্কার, আইনেস্টাইন কাব গোর্কী সনদ কলকাতা বিশেষ সম্মাননা, বিসিআরএ পুরস্কার, ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বাংলা ২০১০ ব্যাঙ্কক, অতন্দ্র পদক কলকাতা পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।

কাহিনী সংক্ষেপ

একসময় প্রমত্তা পদ্মার জলের ওপর যাদের জীবিকা নির্ভর করতো, তেমন এক জাল ও নৌকা ব্যবসায়ী ‘ময়েজ’। পদ্মার বুকে চর জেগে ওঠায় ধীরে ধীরে তার ব্যবসা সংকোচিত হতে থাকে। এক সময় পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়ে সে। ঘরে তার অশিতিপর বৃদ্ধ শাশুড়ী ফুলবানু, স্ত্রী রুমালী এবং ৮-৯ বছরের মেয়ে নদী।

পদ্মা যখন ভরা যৌবনা তখন ময়েজের ব্যবসাও ছিল রমরমা। পদ্মার ভাঙ্গনে অনেক কিছু হারিয়েও ভাল ছিল সে। কিন্তু মানবরূপী দানবের হিংস্র থাবায় পদ্মা যখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে বসেছে, তখনই ময়েজ ও তার পরিবারের ওপর নেমে আসে অভিশাপের কালো ছায়া। সব হারিয়ে সে হয়ে যায় নিঃস্ব। ফুলবানু রক্ষা করতে পারে না তার ঘর। রুমালি বাঁচিয়ে রাখতে পারে না তার গরু ও এক মাত্র মেয়ে নদীকে। ময়েজ রক্ষা করতে পারে না তার সুখের সংসার। অন্তর্ধান ঘটে (হারিয়ে যায়) একটি পরিবারের।

Post Bottom Ad